
প্রকাশিত: Sun, Jan 1, 2023 4:13 PM আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 11:02 AM
আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কতোটা আধুনিক যুগে চলে?
কাজী এম মোরশেদ
আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’। এইটা কতোটা আধুনিক যুগে চলে সেটা সবসময় বড় প্রশ্ন। এর আরেক অর্থ দাঁড়ায় গরিবের বউ সবার ভাবী ধরনের, কতোজনকে খুশি করে চলা যায়। বাংলাদেশ মানবাধিকার ইস্যুতে দুই পরাশক্তির কথা চালাচালি চলছে। দরকার মতো কোনটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ, আবার যারা বলেনÑ তারা দুইজনই নিজেদের ব্যাপারে উদাসীন। কথাটা মূলত অর্থনৈতিক শক্তিতে কে শক্তিশালী সঙ্গে কে তাদের মিত্ররাষ্ট্র তাঁর উপরও নির্ভর করে। আমাদের বাণিজ্য নিয়ে কথা, বন্ধুত্ব বা বৈরীতার সময় নাই। কারো লেজুরবৃত্তি করতে গেলে সমূহ বিপদ আসতে পারে। আমরা কি করতে পারি বা করা উচিত সেটা নীতিনির্ধারকরা ঠিক করুক। তবে বিভিন্ন ইস্যুতেই বলতে হয়, আমরা একটা জটিল অবস্থানে বসে আছি, খুব সহজে গিঁট ছুটবে মনে হয় না। বাণিজ্যে আমেরিকা ও মিত্রদের উপর নির্ভরতা, ঋণে চীন নির্ভরতা, দেশের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ভারতের উপর নির্ভরতা, খাদ্য সার ও পারমাণবিক চুল্লিতে রাশিয়া নির্ভরতা, একদিকে দাঁড়ানোর অবস্থা নাই, অন্যদিকে শোবারও নাই। মাঝামাঝি বসে আছি।
আমেরিকা একটা জাহাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা রাশিয়ার স্পার্টা থ্রি। রাশিয়া জাহাজের নাম বদলে উরসা মেজর নাম দিয়ে চালাচ্ছে। এই জাহাজে করে রূপপুরের পারমানবিক চুল্লির সরঞ্জাম দেশে এসেছে। বর্তমানে বিশেষ পন্য খালাসে পায়রা বন্দর ব্যবহার হয়, এটা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হয় না। উরসা মেজর ও স্পার্টা থ্রি একই জাহাজ। রেফারেন্স হলোÑ ওগঙ হড় ৯৫৩৮৮৯২, গগঝও ২৭৩৩৯৬১৩০. তৈরি ২০০৯, লম্বা ১৪২ মিটার, চওড়া ২৩ মিটার। ধরন কার্গো জাহাজ পূর্বের নাম স্ক্যান ব্রিটানিয়া, হন্দাই ব্রিটানিয়া, ইআইটি পালমিনা। পায়রায় নোঙর করার পর বাংলাদেশ সরকার থেকে জানানো হলো এটা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত, ভিড়তে পারবে না। রাশিয়া এতে প্রতিক্রিয়া দেখালো, আমেরিকা খুশি হলো। এখানে আপনি একজনের বৈরী একজনের বন্ধু হয়ে গেছেন। এটা ডিসেম্বর ২৪ এর কথা। এবার উরসা মেজর পায়রা থেকে কিছুটা সরে মংলার কাছে আছে। ২৯ ডিসেম্বরই ঠিক করেছে ভারতের কোন বন্দরে যাবে এবং সেখান থেকে ফিডার ভেসেলে করে বাংলাদেশে পণ্য পৌছে দেবে। পণ্য মানে পারমাণবিক চুল্লির সরঞ্জাম যা রূপপুর যাবে। বাংলাদেশ সরকার চুপ করে গেছে, বা মেনে নিয়েছে, অথবা নিজের কূটনৈতিক বিজয়ের খুশিতে আত্মহারা, জাহাজ ভিড়তে দিলো না আবার পণ্য খালাস হলো।
আমার ধারণা ব্যাপারটা এতো সহজ না যেমন মনে হচ্ছে। এখানেও সেই বৈরীকে বন্ধু বানানো আর বন্ধুকে বৈরি বানানোর ব্যাপার থেকেই যাচ্ছে। এতো সহজ সমাধান কখনোই সহজ হয় না। বাংলাদেশের উচিত ছিলো অন্য কোনো লোকেশানে পাঠিয়ে জাহাজ বদলানো যেটা নিষেধাজ্ঞা বহির্ভূত, সেটাতে পায়রায় আনা। সেটাতে বন্ধু বৈরী হতো না, বৈরীও বন্ধু থেকে যেতো, সময় কিছু বেশি লাগতো। ভারত আর চীন কিছু ক্ষেত্রে যা আমেরিকা ও তাঁর মিত্রদের পছন্দের নয়, সেই ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে একই সুরে কথা বলাটা আমেরিকার পছন্দ না। আমেরিকা চায় চীনকে চাপে রাখতে কোয়াড চুক্তি যেন কাজ করে যার অংশ ভারত। সেই ভারতও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে এই উরসা মেজর জাহাজকে নোঙর করতে দেয়া তাদের পছন্দ হবে না। সমস্যা দেখেন, রাজায় রাজায় যুদ্ধ, মাঝে সমস্যায় পরতে পারে উলুখাগড়া। মার্কিন কোনো পণ্য নিষেধাজ্ঞা দিলে রাশিয়া কি কোলে তুলে নেবে, কিংবা পরমাণু চুল্লির ঋণ মাফ করে দেবে? কিছুই করবে না।
আমাদের সেই শক্তি হয় নাই যে আমেরিকার এবং তার মিত্রদের কোনো নিষেধাজ্ঞা বহন করতে পারবো। আমাদের টিভিতে অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী আর সাংবাদিক আছেন, তারা কী বলেন শুনি। আমার মতো কম বোঝা লোক যা বুঝি, এই ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানির দেশের মেজর স্টেকহোল্ডার যারা, তাদের চটানো পুরা বোকামি হবে। লাথি উষ্ঠা খেয়ে হলেও অন্যখাত উঠে আসার আগ পর্যন্ত সহ্য করে নেওয়া ভালো। এরজন্য তারা যদি ব্লু ইকনোমিতে ভাগ বসাতে চায়, সেটা দিলে ব্যালান্স করতে সুবিধা হবে। ভারত আর চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের চেয়ে যে বিপদে কাজে আসে তাঁর পিছনে দাঁড়ানো ভালো। এটাও জানি তারা বিপদে ফেলতেও জানে, কিন্তু অন্তত কিছু নিয়মনীতি মানে। তাদের রাশিয়ার মতো পয়সার অভাব নাই, চীনের মতো ঋণের বদলে পোর্ট নেবার অভ্যাস নাই, ভারতের মতো স্থল, জল পথে পুরো বিছিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পক্ষ হবার সুযোগও কম। সবার সঙ্গে বন্ধু কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়, এইসব ইউটোপিয়ান কথা এই আমলে অচল। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
